পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ

পার্বত্য অঞ্চল & পর্বতশৃঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ
ভারতবর্ষ 29টি রাজ্য ও 7টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত একটি পূর্ণ সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই 29টি রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুজলা-সুফলা রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এই রাজ্যের অবস্থানের আলাদা একটি গুরুত্ব আছে। এজন্য পশ্চিমবঙ্গকে পূর্ব ভারতের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়।
পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত্রফলের দিক থেকে ভারতের মধ্যে 14 তম (88,752 বর্গকিমি) এবং জনসংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ (140.76 crores জন, জনগণনা-2021)| 23টি জেলা নিয়ে এখনকার পশ্চিমবঙ্গের এই চেহারা 1956 সাল পর্যন্ত একই ছিল না। অনেক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে 1956 সালের পর বর্তমান সীমা ঠিক হয়। রাজ্যটির পূর্ব-পশ্চিমের তুলনায় উত্তর-দক্ষিণের বিস্তৃতি বেশি এবং গড়ন মোটামুটি লম্বাটে ধরনের।
ভারতের পূর্বের একটি রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ। অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের পশ্চিমভাগ ছিল, তাই এর নাম রাখা হয় পশ্চিমবঙ্গ। এর অক্ষাংশগত বিস্তার 21°38′ উত্তর থেকে 27°10′ উত্তর। এর দ্রাঘিমাগত বিস্তার 85°30′ পূর্ব থেকে 89°53′ পূর্ব। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-দক্ষিণ বিস্তার হল 623 কিমি এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় 320° কিমি বিস্তৃত। এই রাজ্যের সংকীর্ণতম অংশ হল উত্তর-দিনাজপুর জেলার চোপড়া যা 9 কিমি প্রশস্ত যা চিকেন’স নেক নামে পরিচিত। কর্কটক্রান্তি রেখা পশ্চিমবঙ্গকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান
Table of Contents

কর্কটক্রান্তি রেখা বিস্তৃত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি জেলার উপর দিয়ে যথা – নদীয়া (কৃষ্ণনগর, ধুবুলিয়া), পূর্ব বর্ধমান (পূর্বস্থলী, গুসকরা, আউসগ্রাম), পশ্চিম বর্ধমান (দুর্গাপুর), বাঁকুড়া (বড়জোড়া, গঙ্গাজল ঘাটি) এবং পুরুলিয়া (আনারা, জয়পুর) পশ্চিমবঙ্গের আয়তন 88752 কিমি যা ভারতের 14তম রাজ্য। সমগ্র ভারতের 2.67 শতাংশ আয়তন পশ্চিমবঙ্গ দখল করে। পশ্চিমবঙ্গ ১টি প্রতিবেশী রাজ্যের সীমানা স্পর্শ করেছে। এগুলি হল পশ্চিমে বিহার ও ঝাড়খণ্ড (সর্বাধিক সীমানা), দক্ষিণে ওড়িশা, উত্তর-পূর্বে আসাম এবং উত্তরে সিকিম। পশ্চিমবঙ্গ প্রতিবেশী তিনটি দেশের সঙ্গে আন্তঃর্জাতিক সীমানা স্পর্শ করে। এগুলি হল উত্তরে-ভুটান, উত্তর-পশ্চিমে নেপাল এবং পূর্বে বাংলাদেশ (সর্বাধিক সীমানা স্পর্শ করে 2272 কিমি)। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান
স্বাধীনতা-উত্তর পর্বে ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ
স্বাধীনতার আগের অবিভক্ত বঙ্গদেশ 1947 সালের 15 আগস্ট দু-ভাগে ভাগ হয়। পূর্ব দিকের অংশ পূর্ব পাকিস্তান নামে পৃথক দেশরূপে (1971 সালের পর বাংলাদেশ নামে) এবং পশ্চিম দিকের অংশ ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ নামে বিভক্ত হয়। 1947 সালে স্বাধীনতার পর 14টি জেলা নিয়ে এই রাজ্যের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু 1956 সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক সীমার অনেকবার পরিবর্তন হয়। 1948 সালে বিহারের ইসলামপুর মহকুমাকে উত্তর দিনাজপুর (ওই সময়ে পশ্চিম দিনাজপুর নামে, অবিভক্ত জেলা ছিল) জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। 1950 সালে কোচবিহার নামে দেশীয় রাজ্যকে (Princely State) পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান
ফরাসি অধিকৃত উপনিবেশ চন্দননগরকে 1952 সালে প্রথমে ভারতে এবং পরে 1955 সালে হুগলি জেলার একটি মহকুমা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 1956 সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন মোতাবেক ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলির সীমানার পুনর্বিন্যাস ঘটে। এর ফলে বিহারের মানভূম জেলার কিছু অংশ নিয়ে পুরুলিয়া জেলা তৈরি হয়। ওই একই বছরে বিহারের পূর্ণিয়া জেলার কিছু অংশ উত্তর দিনাজপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত হয়। এভাবে ওই সময়ে বিহারের প্রায় 8,130 বর্গকিমি স্থান পশ্চিমবঙ্গের আওতায় আসে I
ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির নিজস্ব শাসনব্যবস্থা আছে। পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের অঙ্গরাজ্যের মোট সংখ্যা 29টি। নবতম রাজ্যটি হল তেলেঙ্গানা। যেসময় রাজ্য সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয় তারা হল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। ভারতে 7টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আছে। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি করে বিধানসভা আছে এবং শাসন ব্যবস্থার শীর্ষে থাকেন রাজ্যপাল। তবে খুব কৌতূহলের বিষয় যে দিল্লির এই বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও এটি কিন্তু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। কারণ একে অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা দিলে ভারতের রাজধানী বলে কিছুই থাকবে না। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান
রাজ্য
দেশ | পশ্চিমবঙ্গের সাথে সীমানা |
---|---|
বাংলাদেশ | 2217 কিমি (বৃহত্তম পূর্ব) |
নেপাল | 90 কিমি (ক্ষুদ্রতম উত্তর পশ্চিম) |
ভূটান | 150 কিমি (উত্তর পূর্ব) |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গের সাথে সীমানা |
---|---|
ওড়িশা | 150 কিমি (দক্ষিণ পূর্ব) |
ঝাড়খন্ড | 500 কিমি (বৃহত্তম, পশ্চিম) |
বিহার | 300 কিমি (উত্তর পশ্চিম) |
আসাম | 90 কিমি (উত্তর পূর্ব) |
সিকিম | 60 কিমি (ক্ষুদ্রতম, উত্তর) |
- পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রাণী হল মেছো বিড়াল (Fishing Cat)।
- পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পাখি হল সাদা গলাযুক্ত মাছরাঙা। রাজ্য বৃক্ষ হল ছাতিম গাছ।
- পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য ফুল হল শিউলি (Night flowering Jasmine)। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান
পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য বাঁধ:
- মুরুগুমা বাঁধ (পুরুলিয়া)
- সালি নদীর বাঁধ (বাঁকুড়া)
- মুকুটমণিপুর বাঁধ (কংসাবতী নদী, বাঁকুড়া) ও কুমারী পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান
ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ (Physiographic Divisions)
(1) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের ভূমি পর্বতময়। শিলিগুড়ি মহকুমা বাদে সমগ্র দার্জিলিং জেলা এবং জলপাইগুড়ি জেলার উত্তরাংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল সাধারণত দার্জিলিং হিমালয়ান অঞ্চল নামে পরিচিত। বর্তমানে একেবারে উত্তরের রাজ্যগুলি পূর্ব হিমালয়ে অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল সান্দাকফু যার উচ্চতা 3630 মিটার। তিস্তা নদী এই অঞ্চলকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। যথা- পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান
(i) পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল (Western Mountain Region)

এই অঞ্চলের প্রধান দুটি পার্বত্য শ্রেণী হল সিঙ্গালিলা যা নেপাল থেকে সিকিমকে পৃথক করেছে এবং অপরটি হল দার্জিলিং পর্বত শ্রেণী। কালিম্পং-এর কাছে পেডং নামক ক্ষুদ্র শহরের উপর দিয়ে প্রাচীন সিল্ক রুট গেছে। পেডংকে অর্কিড-এর শহরও বলা হয়।
সিঙ্গালীলা পর্বতশ্রেণীর প্রধান পর্বতশৃঙ্গগুলি হল-সান্দাকফু (3630 মি.), ফালুট (3,595 মি.), সবরগ্রাম (3543 মি.) এবং টাঙ্গালু (3036 মি.)।
দার্জিলিং পর্বতশ্রেণী ঘুম শ্রেণী নামে পরিচিত। ঘুম হল পৃথিবীর উচ্চতম রেলস্টেশন। এই অঞ্চলের উচ্চতম শৃঙ্গ হল টাইগার হিল (2573 মি.)।
(ii) পূর্বের পার্বত্য অঞ্চল (Eastern Mountain Region)
ঋষিলা (3121 মি.) এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। সিঞ্চলা এই অঞ্চলে ভুটান ও জলপাইগুড়ির মধ্যে সাধারণ সীমান্ত। এই অঞ্চলের প্রধান গিরিপথ হল বক্সা। এটি ভারত ও ভুটানের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে
(2) পশ্চিমের মালভূমি (Western Plateau):
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত পুরুলিয়া, বীরভূমের পশ্চিমাংশ, বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নিয়ে পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল অবস্থিত। এই মালভূমি ছোট ছোট পাহাড় দ্বারা গঠিত। এগুলির স্থানীয় নাম ডুংরি বা টিলা। অযোধ্যা এবং বাঘমুণ্ডি পুরুলিয়ার প্রধান দুটি পাহাড়। বীরভূমের বক্রেশ্বরে উষ্ণপ্রস্রবন আছে। এছাড়াও বীরভূমের খায়রোল ও মহম্মদ বাজারে কিছু আর্টেজিও কূপ দেখা যায়।
এই অঞ্চলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়

পাহাড় | জেলা | পাহাড় | জেলা |
---|---|---|---|
অযোধ্যা | পুরুলিয়া | মামা-ভাগ্নে | বীরভূম |
বাঘমুণ্ডি | পুরুলিয়া | মথুরখালি | বীরভূম |
পাঞ্চেৎ | পুরুলিয়া | শুশুনিয়া | বাঁকুড়া |
ভাণ্ডারি | পুরুলিয়া | বিহারীনাথ | বাঁকুড়া |
বেলপাহাড়ি | পশ্চিম মেদিনীপুর |
Definition and Nature of Biosphere