Development of Biogeography

Real Facts about Development of Biogeography/জীব-ভূগোলের বিকাশ
অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে বর্তমানকাল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রমণের মধ্যে দিয়ে জীব-ভূগোল বিকাশ লাভ করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলির উপর নির্ভরশীল
থাকলেও বর্তমানে জীব-ভূগোল একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে জীব-ভূগোলের উন্নয়ন বিজ্ঞানের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে সম্পর্কযুক্ত

Table of Contents
this picture is taken from freepik.com
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট (Historical Background)
জীব-ভূগোল বিষয়টি মূলত জীব বিজ্ঞান থেকে উদ্ভূত হয়েছে। জীব-বিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্য, ধারণা এবং অনুশীলন প্রক্রিয়াগুলিকে ভৌগোলিকগণ গ্রহণ করেছেন। এভাবেই জীব-ভূগোল একটি বিষয় হিসাবে প্রতিষ্ঠালাভ করেছে। জীব-বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জীবমণ্ডলের ধারণা পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়েছে এবং ক্রমশ জীব-ভূগোলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপত্তির সূত্রে জীব-ভূগোল-উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, আবহবিদ্যা, ভূ-তত্ত্ববিদ্যা ইত্যাদি বিশেষীকৃত (specialized) বিষয়গুলির সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। প্রাচীনকালে প্রকৃতি সম্পর্কে কৌতূহল নিবৃত্তিকরণের প্রচেষ্টায় সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাগুলির বর্ণনা করা এরং সেগুলির শ্রেণীবিভাগেরমধ্যেই বিজ্ঞানচর্চা সীমাবদ্ধ ছিল।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে কার্ল ভন লিনে (Carl Von Linne, 1707-78) প্রথম জীবজগতের শ্রেণীবিভাগ ও নামকরণ পদ্ধতি প্রচলন করেন। [Development of Biogeography] এর মাধ্যমেই জীব- ভূগোলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। এরপরে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে আলেকজাণ্ডার ভন হামবোল্ট (Alexander Von Humbolt), এডওয়ার্ড ফোবস্ (Edward Forbes), জোসেফ হুকার (Joseph Hooker), লুইস আগাসি (Louis Agassiz) প্রমুখের প্রচেষ্টায় জীব- ভূগোলের উন্নতি ঘটে।
জীব-ভূগোলের জনক আলেকজাণ্ডার ভন হামবোল্ট তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকা * ভ্রমণকালে সংগৃহীত নানা তথ্যের ভিত্তিতে লিখিত রচনাগুলি প্রকাশ করতে শুরু করেন ১৮০৪ খ্রীষ্টাব্দ থেকে। তাঁর এই রচনাগুলিতে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং সেই সঙ্গে ভূ-পৃষ্ঠে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর বণ্টন বৈশিষ্ট্যও লিখিত রয়েছে।
উদ্ভিদ ও প্রাণীর বণ্টন এবং ভূ-পৃষ্ঠে উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্থানিক বিভিন্নতার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুটি যুগান্তকারী ধারণার উদ্ভব ঘটেছে। এই (দুটি ধারণা জীব-বিজ্ঞান ও জীব-ভূগোলের উন্নতিতে এক বৈপ্লবিক চেতনার সূচনা করেছে। প্রথমত প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবের অভিযোজন। দ্বিতীয়ত প্রাকৃতিক নির্বাচনের (Natural Selection) মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বাস্তক্ষেত্রে (habitat) যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি বা কতকগুলি জীবের উদবর্তন। এই দুইধারণার ওপরেই ডারউইনের বিবর্তনবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত।[Development of Biogeography]
Nature and Scope of Biogeography
জীব-ভূগোলের ক্রমবিস্তার (Expansion of Biogeography)
প্রারম্ভিক পর্যায়ে জীব-ভূগোল প্রাচীন প্রকৃতিবিদ্গণ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য এবং ঐ তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের উপর নির্ভরশীল ছিল। পরবর্তীকালে জীব-ভূগোল দুটি চিন্তাধারা অনুসরণ করে উন্নতিলাভ করতে থাকে।[Development of Biogeography]
প্রথমত শ্রেণীবিভাগ ও নামকরণ সংক্রান্ত (Taxonomic) চিন্তাধারা এবং দ্বিতীয়ত বাস্তবিদ্যাকেন্দ্রিক (Ecological) চিন্তাধারা। এই দুই-এর মধ্যে প্রথম দৃষ্টিভঙ্গীটি উদ্ভিদ বা প্রাণী-ভূগোলের বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে। জীব-ভূগোলের উদ্দেশ্য হল একটি বিশেষ উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির ভৌগোলিক বন্টন বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করা এবং এর মাধ্যমে উক্ত প্রজাতির উৎস, বিবর্তন ও বিসরণ (dispersal) প্রক্রিয়ার অনুসন্ধান করা।

যে সমস্ত প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রকগুলি এই বণ্টনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে সেগুলির পর্যালোচনা করা এবং তাদের তুলনামূলক গুরুত্ব নিরূপণ করা জীব- ভূগোলের আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। এছাড়াও বিভিন্ন ভূ-তাত্ত্বিক যুগে সংঘটিত প্রাকৃতিক ঘটনাবলী কিভাবে উদ্ভিদ বা প্রাণীর বর্তমান বণ্টনকে প্রভাবিত করেছে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন কিভাবে জীবসমূহের বিবর্তনগত ইতিহাসকে নির্দেশিত করেছে ইত্যাদি বিষয়গুলি জীব-ভূগোলে আলোকিত হতে শুরু করে।
আধুনিককালে জীবের প্রজাতিগত সংস্থানে মানুষের ভূমিকাকেও জীব-ভূগোলের বিষয়বস্তু রূপে গ্রহণ করা হয়। এইভাবে জীব-ভূগোল উত্তরোত্তর বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কৌতূহলদ্দীপক বিষয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[Development of Biogeography]
উদ্ভিদ-ভূগোলের সূচনা (Introduction of Phytogeography)
প্রাচীনকালে বিভিন্ন ভূ-পর্যটক কর্তৃক আহৃত তথ্যের ভিত্তিতে ভূ-পৃষ্ঠে উদ্ভিদ সংস্থানের আঞ্চলিক পার্থক্যের বর্ণনাই ছিল উদ্ভিদ-ভূগোলের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়।[Development of Biogeography]
সে সময়ে উদ্ভিদের আঞ্চলিক পার্থক্যের কারণ হিসাবে জলবায়ুকেই প্রধান বাস্তুতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রকরূপে গণ্য করা হত। এই দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই ‘জীব অঞ্চল’ (Life Zone)-এর (C. H. Merriam, 1894) ধারণার উৎপত্তি ঘটে। ‘জীব-অঞ্চল’ হল জলবায়ুগত এমন এক তাপীয় অঞ্চল যা একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উদ্ভিদকুল ও প্রাণীকুলের সমাবেশকে চিহ্নিত করে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে আলেকজাণ্ডার ভন হামবোল্টের উত্তরসুরি আলফন্সে দি ক্যানডলে (Alphonse de Candolle), এ. গ্রিসব্যাচ্ (A. Grisebach), ও. জুড্ (O. Drude) প্রমুখ ভৌগোলিকগণ পৃথিবীরবিভিন্ন অঞ্চলের প্রধান প্রধান উদ্ভিজ্জের গঠন ও আকৃতির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। পরবর্তীকালে * ডব্লু, স্কিম্পার (W. Schimper) তাঁর ‘Plant Geography on a Phyisiological Basis’ গ্রন্থে উদ্ভিদের পরিবেশগত অভিযোজন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন যা জীব-ভূগোলের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছিল।
১৯১৮ খ্রীষ্টাব্দে ডব্লু, কোপেন (W. Köppen) জলবায়ুগত বিভিন্ন উপাদানগুলির ভিত্তিতে পৃথিবীকে কয়েকটি জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেন। এই জলবায়ু অঞ্চলের সীমানাগুলি প্রকৃতপক্ষে প্রধান প্রধান স্বাভাবিক উদ্ভিদাঞ্চলের সীমানার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। এর পূর্বে ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে এ. জে. হারবার্টসন (A. J. Herbertson) জলবায়ু-উদ্ভিদ সম্পর্কের উপর নির্ভর করে “প্রাকৃতিক অঞ্চলের” (Natural Region) ধারণা প্রবর্তন করেন। এইভাবে ধীরে ধীরে উদ্ভিদের বণ্টনে জলবায়ুর ভূমিকার প্রাধান্য সংক্রান্ত মতবাদ বাস্তবিদ্যা, জীব-বিজ্ঞান ও ভূগোলের অনেক ধারণাকে একই দৃষ্টিভঙ্গীর পক্ষপুটে আনয়ন করেছে।[Development of Biogeography]
জীব-ভূগোলে বাস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী (Ecological Approach in Biogeography)
জীব-ভৌগোলিকগণের দৃষ্টিভঙ্গী মূলত বাস্তুতান্ত্রিক ধারণার দ্বারা প্রভাবিত ও নির্দেশিত হয়েছে। ইংরাজ জীব-ভৌগোলিক ম্যারিয়ন নিউবিগিন (Marion Newbigin)-এর মতে, জীব-ভূগোল এবং বাস্তবিদ্যার বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য প্রায় একই, তবে কেবলমাত্র বাস্ততান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী এককভাবে জীব- ভূগোলের বিকাশকে প্রভাবিত করেনি।[Development of Biogeography]

কোনও একটি বিশেষ প্রজাতির জীব ও তার চতুষ্পার্শ্বস্থ পরিবেশের পারস্পরিক সম্পর্ক বা অটেকোলজি (Autecology) সম্বন্ধে জ্ঞান জীব-ভূগোলের ধারণাকে পরিপুষ্ট করেছে। এইভাবে ভৌগোলিকদের কাছে ভূ-পৃষ্ঠে উদ্ভিজ্জের বণ্টনই জীব-ভূগোলের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। আবার উদ্ভিদ প্রজাতির আনুপাতিক উপস্থিতি কোনও অঞ্চলের উদ্ভিজ্জের প্রকৃতি নির্ধারণ করে। সুতরাং বাস্ততান্ত্রিক উদ্ভিদ-ভূগোল (Ecological Phytogeography) হল পারিপার্শ্বিক পরিবেশের নিরিখে সমগ্র উদ্ভিদগোষ্ঠীর বিচার বিশ্লেষণ (সিনইকোলজি: Synecology)। জীব-ভূগোলের বিকাশ প্রধানত উদ্ভিদগোষ্ঠীর বাস্তুতান্ত্রিক পঠন-পাঠনের পথ ধরে অগ্রসর হয়েছে এবং এক্ষেত্রে উদ্ভিদগোষ্ঠীর চারটি বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। যথা-গঠন (structure), বৃদ্ধি (growth), সংযুতি (composition) ও কার্যকারিতা (functions)।[Development of Biogeography]
বাস্তবিদ্যার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতি নির্ধারণে জলবায়ু ব্যতীত অন্যান্য নিয়ন্ত্রকগুলির ভূমিকাও স্বীকৃতিলাভ করতে থাকে। বিশেষত সময় (time element) একটি তাৎপর্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হিসাবে পরিগণিত হয়। এ সংক্রান্ত একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল হেনরী কোয়েলস্ (Henry Cowles) রচিত মিচিগানের বালিয়াড়ির উপর উদ্ভিদের বিবর্তন সংক্রান্ত বইটির প্রকাশ।[Development of Biogeography] বইটির মূল আলোচ্য বিষয় হল, পরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক বাস্তুক্ষেত্রে সময়ের সাপেক্ষ উদ্ভিদগোষ্ঠীর পরিবর্তন বা উদ্ভিদ অনুক্রম (plant succession)। এফ. ই. ক্লিমেন্টস (F. E. Clements) সর্বপ্রথম উদ্ভিদের উৎপত্তি সংক্রান্ত পঠন-পাঠনকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি বলেন যে, উদ্ভিদের বিবর্তনের শেষ পর্যায় বা চরম উদ্ভিজ্জ (climax vegetation)-এর প্রকৃতি জলবায়ু কর্তৃক নির্ধারিত হয়।
বাস্তবিদ্যার এই ধারণার পাশাপাশি ডারউইনের বিবর্তনবাদও ভূগোল চিন্তাকে প্রভাবিত করেছিল। এই তত্ত্বের মূলভাবটিকে ব্যবহার করে ভূমিরূপবিদ্যায় ‘ক্ষয়চক্রের ধারণা’ (ডব্লু, এম. ডেভিস, ১৮৯৯) এবং মৃত্তিকাবিদ্যায় মৃত্তিকার উৎপত্তি সংক্রান্ত চিন্তাধারা বিকাশ লাভ করে। মৃত্তিকা গঠনে জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব স্বীকৃতি পায়। এইভাবে আঞ্চলিক মৃত্তিকার (zonal soils) ধারণা এবং মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগে উৎপত্তিগত ইতিহাসের উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়।
ডেভিসের ক্ষয়চক্রের ধারণার অনুসরণে মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়াকেও বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত করা হয় এবং পরিণত ও অপরিণত মৃত্তিকার ধারণা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সংশ্লিষ্টভূমিরূপের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্তিকা পরিণতি লাভকরতে থাকে এবং চরম উদ্ভিজ্জের প্রতিষ্ঠার পরে মৃত্তিকাটি পরিণত মৃত্তিকায় পর্যবসিত হয়। এই পর্যায়ে স্থানীয় জলবায়ুগত অবস্থার সঙ্গে সর্বাপেক্ষা উত্তমরূপে অভিযোজিত উদ্ভিদ প্রজাতিগুলি সংস্থাপিত হয়। ভূগোলের অন্যান্য শাখা যেমন-ভূমিরূপবিদ্যা, মৃত্তিকা-ভূগোল, জলবায়ুবিদ্যা ইত্যাদির ন্যায় জীব- ভূগোলেও ‘আঞ্চলিকতাবাদ’ (regionalism) ও ‘জলবায়ুগত চরমাবস্থাবাদ’ (climatic climax) প্রাধান্য লাভ করে। বর্তমানেও এই ধারণাগুলি প্রচলিত রয়েছে।[Development of Biogeography]

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে জীব-ভূগোলের বিকাশ (Development of Biogeography during the First Half of the Twentieth Century)
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে জীব-বিজ্ঞান যে হারে উন্নতি লাভ করেছে জীব-ভূগোলের অগ্রগতি সেই হারে ঘটেনি। [Development of Biogeography]যদিও জীব-বিজ্ঞানী ও ভৌগোলিকদের প্রচেষ্টায় ক্ষুদ্রতর দৈশিক (spatial) স্কেলে এবং স্থানীয়ভাবে উদ্ভিদ সংক্রান্ত বহু গবেষণা হয়েছে। জীব-ভূগোলের এই অনগ্রসরতার কারণ হিসাবে অনেকে ভূগোলে ভূমিরূপবিদ্যার প্রাধান্যকে দায়ী করেছেন। তবে এই সময়কালে জীব-ভূগোলের একটি দিক যথেষ্ট গুরুত্ব লাভ করে। পরাগ বিশ্লেষণ (pollen analysis) ও জীবাশ্মের বয়স নির্ধারণের পদ্ধতি আবিষ্কারের পরে অনেক জীব-ভৌগোলিক উদ্ভিদের বিবর্তনগত ইতিহাসের অনুসন্ধান এবং পুরা জলবায়ুর পুনর্গঠন সংক্রান্ত পঠন-পাঠনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।[Development of Biogeography]
এই সময়ে জীব-বিজ্ঞানে প্রজাতি বাস্তুবিদ্যা (Autecology) এবং গোষ্ঠী বাস্তবিদ্যা (Synecology)-র বিস্তৃত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা চলতে থাকে। পরীক্ষাগারে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে পূর্বতন তত্ত্বগুলির সত্যতা যাচাই করা হয়। ফলে উদ্ভিদের গঠন, প্রকৃতি এবং পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক সংক্রান্ত পূর্ব প্রচলিত বহু ধ্যানধারণার পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাস ঘটে। এইভাবে স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কিত দুটি উপেক্ষিত বিষয় ক্রমশ আলোচনার আলোকে আসতে শুরু করে। প্রথমত উদ্ভিদগোষ্ঠীর প্রজাতিগত সংযুতি (species composition) এবং উদ্ভিদ প্রজাতিগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক (interspecific relationship)। এ থেকেই উদ্ভিদ সমাজবিদ্যা (Plant Sociology) নামক বাস্তবিদ্যার অপর একটি শাখার সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত বাস্তুতন্ত্রে শক্তি প্রবাহের নিরিখে বিভিন্ন জীবগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং জীব-পরিবেশ সম্পর্ক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে যথাক্রমে ফেড্রেরিক ক্লিমেন্টস্ (Frederick Clements) এবং এ. জি. ট্যানম্নে (A. G. Tansley)-র নেতৃত্বে বাস্তবিদ্যার বিষয়বস্তু হিসাবে বাস্তক্ষেত্র এবং উদ্ভিদগোষ্ঠী (plant community)-র উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়। [Development of Biogeography]সমসাময়িক ইউরোপীয় জীব- বিজ্ঞানীগণ উদ্ভিদগোষ্ঠীর প্রজাতিগত সংযুতি, বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ইত্যাদি ছাড়াও একই প্রজাতিভুক্ত বিভিন্ন উদ্ভিদের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এ ধরনের বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য আহরণের তাগিদে নমুনা সংগ্রহের (sampling) সংখ্যাতাত্ত্বিক বা পরিমাপভিত্তিক (quantitative) পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এমনকি স্বাভাবিক উদ্ভিদের বর্ণনাতেও আরও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অনুপ্রবেশ ঘটে।

১৯৩০ খ্রীষ্টাব্দের পরে অর্থাৎ জে. বি. ব্ল্যাঙ্কোয়েট (J. B. Blanquet) -এর উদ্ভিদ সমাজবিদ্যা সংক্রান্ত বইটি প্রকাশিত হওয়ার পরে উদ্ভিদ সমাবেশ (plant association)- কে স্বাভাবিক উদ্ভিদের একক রূপে গ্রহণ করা হয়। উদ্ভিদ সমাবেশ বলতে একই ধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি উদ্ভিদগোষ্ঠীকে বোঝায়।[Development of Biogeography] এর পর থেকে উদ্ভিদের শ্রেণীবিভাগ ও উদ্ভিদাঞ্চলের সীমারেখা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমাবেশকেই একক হিসাবে ব্যবহার করা শুরু হয়।
বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে জীব-ভূগোলের বিকাশ (Development of Biogeography during the Last Half of the Twentieth Century)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জীব-ভূগোলে বাস্ততান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রাধান্য হ্রাস পায়। বিস্তৃতির তুলনায় পর্যবেক্ষণ ও পঠন-পাঠনের গভীরতা বৃদ্ধি পায়। বাস্তুতান্ত্রিক সম্পর্ক ও প্রক্রিয়াগুলির উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়। ফলে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতির ব্যবহার হতে থাকে। সামগ্রিকভাবে একটি একক হিসাবে জীবমণ্ডলের ক্রিয়াশীলতা-আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। যাট ও সত্তরের দশকে জীবভূগোলের নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলি পরিলক্ষিত হয়।
(i) তত্ত্বগতভাবে প্রাপ্ত ফল ও বাস্তব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ এবং সেই সঙ্গে তত্ত্বগুলির তাৎপর্য নির্ণয়ের জন্য সংখ্যাতাত্ত্বিক (statistical) পদ্ধতির প্রয়োগ।
(ii) তথ্য আহরণ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় যান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতি।
(iii) স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণীবিভাগের ক্ষেত্রে প্রথাগত (ক্রমঅনুসারে) (hierarchical) ভিত্তি বর্জন করে আন্তঃপ্রজাতি (interspecific) ও অন্তঃপ্রজাতি (intraspecific) সম্পর্ক এবং উদ্ভিদ পরিবেশ সম্পর্ককে ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
জীব-ভূগোলের আধুনিক গতিপ্রকৃতি (Modern Trends in Biogeography)
বিগত তিন শতাব্দী যাবৎ প্রাকৃতিক জৈব সম্পদগুলি দ্রুত নিঃশেষিত হয়েছে। সেইসঙ্গে মানুষের ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে জীবমণ্ডলের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। এর ফলে উদ্ভূত বাস্তুতান্ত্রিক সমস্যাগুলি বর্তমানে জীব-ভূগোলের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। আধুনিক কালে মানুষকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বাস্ততান্ত্রিক উপাদান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অতিরিক্ত পরিমাণে কৃষিজ ফসল উৎপাদনের প্রচেষ্টায় মানুষ বায়ু, জল, ভূমিকে দূষিত করেছে; বিস্ফোরিত জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিবৃত্ত করার প্রয়োজনে উন্নত কারিগরী বিদ্যার প্রয়োগ ঘটিয়েছে। ফলে উক্ত সমস্যাগুলি আরও সংকটপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এই সমস্যাগুলির সমাধান এবং প্রাকৃতিক জৈব সম্পদগুলির ব্যবস্থাপনা (management) নির্ভর করে বাস্ততান্ত্রিক ক্রিয়াশীলতা, প্রক্রিয়াসমূহ এবং বাস্তুতন্ত্রের উপাদানগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্বন্ধ সম্পর্কে সঠিক অনুধাবনের উপর। এই প্রয়োজনেই বাস্তুবিদ্যার পঠন পাঠনে বাস্তুতন্ত্রকে একটি কার্যকরী একক হিসাবে গ্রহণ করা হয়। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমগ্র জীবকুল ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্মিলিতভাবে উক্ত অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) গড়ে তোলে। অনেক সময় এই বাস্তুতন্ত্রের কোন একটি নির্দিষ্ট উপাদান সম্পর্কে বিশেষীকৃত অনুশীলন হয়েছে। কিন্তু তা কখনই বাস্তুতন্ত্রের সামগ্রিকতার উপর আলোকপাত করেনি।
চার্লস এলটন (Charles Elton), ভি. সি. উইনি-এডওয়ার্ড (V. C. Wynne-Edward) প্রমুখের প্রচেষ্টায় বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ এবং খাদ্য পরিবহণ প্রক্রিয়ার সংখ্যাতাত্ত্বিক পঠন-পাঠনের মাধ্যমে বাস্তবিদ্যার পর্যালোচনায় বাস্তুতন্ত্রের ধারণাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এর ফলে জীব-ভূগোলও পুনর্যৌবন লাভ করেছে। জীবমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদান যেমন উদ্ভিদ, প্রাণী (মানুষসহ), মৃত্তিকা, বায়ুমণ্ডল প্রভৃতি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই সম্পর্ক সহজেই অনুধাবন যোগ্য। এই ধারণা জীব-ভূগোলের মূল ভিত্তিকে যথেষ্ট শক্তিশালী করে তোলে। বাস্তুতন্ত্রের ধারণার প্রয়োগের অপর একটি সুবিধাজনক দিক হল যে, এই ধারণাটিকে যে কোন স্কেলে ব্যবহার করা যায়। সর্বোপরি মনে রাখতে হবে মানুষ এই বাস্তুতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই মানুষের ভূমিকা উপেক্ষা করে জীব-ভূগোলের অস্তিত্ব কল্পনা করা সম্ভব নয়।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, জীব-ভূগোলের কেন্দ্রীয় বিষয় হল জীব। সুতরাং পৃথিবীর যে অংশে জীবসমূহের বাস সেই জীবমণ্ডলের গঠন, কার্যকারিতা, সংস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন।