Modern age and arrival of foreigners

Modern age and arrival of foreigners
Modern age and arrival of foreigners
বিভিন্ন পর্যটকদের বিবরণ ও অন্যান্য সূত্র থেকে ভারতের অপরিসীম ঐশ্বর্য্যের কথা জানতে পেরে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলি ভারতে পৌছানোর সামুদ্রিক পথের খোঁজ করতে থাকে। এই ব্যাপারে পথিকৃৎ ছিল পর্তুগীজরা। 1498 সালে পর্তুগীজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা কালিকট বর্তমানে কোঝিকডে (Kozhikode) পৌঁছানোর সামুদ্রিক পথ আবিষ্কার করেন। তাঁর এই আবিষ্কার পর্তুগীজদের অন্যান্য ইউরোপীয় জাতিদের মধ্যে প্রথম বলে প্রতিপন্ন করে ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন ও উপকূলবর্তী স্থান গুলিতে নিজস্ব ঘাঁটি গড়ার ক্ষেত্রে। এরপর একে একে ডাচ, ইংরেজ, ডেন এবং ফরাসীদের আগমন ঘটে। – বস্তুতঃ এদের মধ্যে কেবল ইংরেজ ও ফরাসীরাই ভারতে ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীতায় টিকে যায়। তবে কেবলমাত্র বাণিজ্যই তাদের লক্ষ্য থাকে না। ধীরে ধীরে ক্ষমতার লোভে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও তাদের প্রবেশ ঘটে। অতঃপর মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর যে রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়, সেই অবস্থা এই দুই জাতির ক্ষমতা দখলের ইচ্ছাকে বহুলাংশে অনুঘটকের কাজ করে।Modern age and arrival of foreigners

ইউরোপীয়দের আগমন
শেক্সপীয়ার ভারতকে “ল্যান্ড অফ গ্রেট অপারচুনিটিস” (Land of Great Opportunities) আখ্যা দিয়েছেন। আবার হেগেলের ভাষায় ভারত হল- Land of Desires। বিগত
পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের কেবলমাত্র তিনটি পথ ছিল, যেগুলি সবকটিই সামুদ্রিক পথ-
(ক) প্রথমটি হল, মধ্য এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত ‘ক্যাম্পিয়ান ও ব্ল্যাক সি’ হয়ে।
(খ) দ্বিতীয়টি হল, সিরিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে।
(গ) তৃতীয়টি, রেড সি-এর মধ্য দিয়ে মিশর হয়ে। কিন্তু 1453 সালে কন্সট্যান্টিনোপলের যুদ্ধের পর তুর্কীরা সবকটি রাস্তাই বন্ধ করে দেয়।
Modern age and arrival of foreigners
Making of The Constitution: Shocking Facts
পর্তুগীজ (Portuguese)
ভাস্কো-দা-গামা 1498 সালের 20 শে মে কালিকট বন্দরে পৌঁছান এবং কালিকটের তৎকালীন রাজা জামোরিন তাকে অভ্যর্থনা জানান।
- কালিকট, কোচিন এবং ক্যান্নানোরে বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে।
- উত্তমাশা অন্তরীপ (Cape of Good Hope) হয়ে আবিষ্কৃত এই নতুন সমুদ্র পথ ও কলম্বাস কর্তৃক আমেরিকার খোঁজ -এই দুই ঘটনাকেই অন্যতম শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বলে আখ্যায়িত করেছেন অ্যাডাম স্মিথ।
ভারতে পর্তুগীজদের প্রথম রাজধানী ছিল কোচিন (1502) যা পরবর্তীকালে গোয়াতে স্থানান্তরিত হয়।
- ভারতে নিযুক্ত প্রথম পর্তুগীজ গভর্নর ছিলেন- ফ্রান্সিসকো ডে আলমিডা (1505-09) যিনি ‘ব্লু ওয়াটার পলিসি’ চালু করেছিলেন।
- 1509 সালে আলফানসো ডি আলবুকার্ক ভারতে ‘পর্তুগীজ গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি বিজাপুরের হাত থেকে গোয়া দখল করেন (1510 সালে) এবং ‘দ্য পলিসি অফ ইম্পেরিয়ালিসম’ এর সূচনা করেন।
- ভারতে পর্তুগীজদের সর্বশ্রেষ্ঠ সামুদ্রিক শক্তিতে পরিণত করে 1515 সালে আলবুকার্ক প্রয়াত হন।
- 1530 সালে নিনো – – ডা কুনহার আমলে পর্তুগীজদের – রাজধানী কোচিন থেকে গোয়াতে স্থানান্তরিত হয়। তিনি তৎকালিন গুজরাতের শাসনকর্তা বাহাদুর শাহ-র কাছ থেকে 1534 সালে ‘দিউ এবং বেসিন’ অধিগ্রহন করেন। কিন্তু 1631 সালে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অনুগত কাসিম খানের নিকট পরাজিত হয়ে পর্তুগীজরা হুগলী পরিত্যাগ করেন।
- পর্তুগীজরা 1559 সালে দমন অধিগ্রহণ করে।Modern age and arrival of foreigners
- ষষ্ঠদশ শতকের অন্তিমলগ্নে পর্তুগীজদের ক্ষমতা ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে।
- 1661 সালে, ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় চালর্সের সাথে পর্তুগালের রাজার বোন ক্যাথরিনের বিবাহের সময় ‘বোম্বাই’ কে রাজকীয় উপহার হিসাবে প্রদান করা হয়।
- পর্তুগীজরা এরপর আর সেরকমভাবে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, এর পেছনে যে কারণগুলি ছিল তার অন্যতম হল- ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও বোম্বেটেগিরি।
- পর্তুগীজরা ভারতীয়দের তামাক চাষ শিখিয়েছিল।
- ভারতে প্রথম পর্তুগীজ কারখানা স্থাপিত হয় কালিকটে।
- প্রখ্যাত সন্ত ফ্রান্সিস জেভিয়ার ভারতে আসেন মার্টিন আলফানসো ডিসুজার (1542-45) সাথে।
- ধীরে ধীরে প্রায় সমস্ত পর্তুগীজ অধিগৃহীত অঞ্চলগুলিই মারাঠা (সলসেট এবং বেসিন, 1739) ইংরেজ ও ডাচদের অধীনে চলে যায় কেবলমাত্র গোয়া, দমন ও দিউ 1961 সালে অবধি পর্তুগীজদের অধীনে ছিল।
Modern age and arrival of foreigners

ডাচ (Dutch)
নুমানিক 1595 সাল নাগাদ ডাচদের ভারতে আগমন ঘটে।
- 1602 সালে গঠিতএছাড়াও এই হয়, ‘ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী’ যুদ্ধ করার ক্ষমতা প্রাপ্ত হিসাবে, আর এই ক্ষমতা প্রদান করা হয় ডাচ পার্লামেন্টের একটি চার্টার কর্তৃক।নবগঠিত কোম্পানীকে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন, অঞ্চল অধিগ্রহন ও বিভিন্ন দুর্গ গঠনের অনুমতি প্রদান করা হয়।
- সুরাট, কাম্বে এবং আমেদাবাদে ডাচরা বাণিজ্য বন্দর গড়ে তোলে।
- এক সময়, ডাচরা পর্তুগীজদের হারিয়ে সেরা ইউরোপীয় হিসাবে বাণিজ্যে একক কর্তৃত্ব স্থাপন করে।
- 1690 সাল অবধি পুলিকট তাদের প্রধান কেন্দ্র ছিল, অতঃপর নাগাপত্তিনামে তা স্থানান্তরিত হয়।
- সপ্তদশ শতাব্দী (প্রায় 1650 সাল থেকে) ইংরেজরা ভারতে এক বিশাল ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
- প্রায় 70 বছর ধরে চলা অ্যাঙ্গলো-ডাচ যুদ্ধে ডাচরা ধীরে ধীরে তাদের অধিগ্রহন করা স্থানগুলি ইংরেজদের কাছে
- হেরে যেতে থাকে।
- ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ভারতের যে সব স্থানে কারখানা স্থাপন করেছিল। সেগুলি হল মসুলিপত্তনম (1605), পুলিকট (1610), সুরাট (1616), বিমলিপত্তম (1641), কারাইকাল (1645), চিনসুরা (1653), কাশিমবাজার, বরাহনগর, পাটনা, বালাসোের, নাগাপত্তিনম (সবকটি 1658 সালে) এবং কোচিন (1663)।
- এরপরে ‘বেদারার যুদ্ধে’ (1759) ব্রিটিশদের কাছে পরাজয়ের মাধ্যমে ডাচ সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
Modern age and arrival of foreigners
ইংরেজ (British)
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রথমে পরিচিত ছিল- ‘গর্ভনর অ্যান্ড কম্পানী অফ মার্চেন্টস অফ লন্ডন ট্রেডিং ইনটু দি ইষ্ট ইন্ডিস, প্রথম রানী এলিজাবেথ 1600 সালের 31 শে ডিসেম্বর কোম্পানি ‘রয়াল চার্টার’ অনুমোদন করেন।
- কোম্পানির প্রথম গর্ভনর ছিলেন থমাস স্মিথ এবং ওই বণিক গোষ্ঠী পরিচিত ছিল ‘মার্চেন্ট অ্যাডভেনচারাস’ নামে।
- জাহাঙ্গীর কর্তৃক 1613 সালে উইলিয়াম হকিন্সকে 400 টি মনসব প্রদান করা হয়। জাহাঙ্গীরের ‘ফরমান’ দ্বারা ভারতে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্থাপন করার অনুমতি দেওয়া হয়। অতঃপর 1613 সালে সুরাটে ব্রিটিশদের কর্তৃক প্রথম বাণিজ্যিক কারখানা স্থাপিত হয়।
- 1615 সালে, প্রথম জেমস জাহাঙ্গীরের দরবারে নিজের দূত স্যার থমাস রো-কে পাঠিয়েছিলেন।-
- 1616 সালে ব্রিটিশ কোম্পানী মসুলিপত্তনমে আর একটি কারখানা স্থাপন করে।
- 1639 সালে রাজা চন্দ্রগিরি কর্তৃক মাদ্রাজ প্রদত্ত করা হয়। 1642 সালে বাঙ্গালোরে কারখানা ও 1644 সালে মাদ্রাজে-এ সেন্ট জর্জ দুর্গ তৈরী হয়।
- 1661 সালে বোম্বেকে পর্তুগীজ রাজকন্যা ক্যাথরিন ব্রাগেনসা বিয়ে করার উপহার স্বরুপ দ্বিতীয় চালর্সকে প্রদান করা হয়। বার্ষিক 10 পাউন্ডের বিনিময়ে রাজা দ্বিতীয় চার্লসের কাছ থেকে কোম্পানি লাভ করে।Modern age and arrival of foreigners
- 1690 সালে জব চার্নক সুতানুটিতে একটি কারখানা পত্তন করেন এবং 1698 এ সুতানুটি, কলিকাতা ও গোবিন্দপুর গ্রামগুলি জমিদারদের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে ব্রিটিশরা। পরবর্তীকালে ওই তিনটি গ্রামকে নিয়ে গড়ে ওঠে কোলকাতা শহর। সুতানুটিতে পত্তন করা কারখানাকে 1700 সালে ফোর্ট উইলিয়ামে পরিণত করা হয়।
- 1694 সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট একটি রেসোলিউশন পাসের মাধ্যমে ইংরেজদের পূর্বে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে সমানাধিকার প্রদান করে। ইতিমধ্যে 1698 সালে “The English Company of Merchants Trading to the East Indies” নামে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিও গঠিত হয়।
- 1700 সালের মধ্যে বোম্বে, কোলকাতা ও মাদ্রাজ ব্রিটিশদের তিনটি প্রধান শহর হয়ে ওঠে। যার রাজধানী ছিল কোলকাতা।
- 1717 সালে, ফারুক শিয়রের ফরমান দ্বারা সুতানুটি গোবিন্দপুর এবং কলিকাতা প্রদান করা হয় হ্যামিলটনকে যা কোম্পানির ‘ম্যাগনা কার্টা’ (Magna Carta) নামে পরিচিত।
- 1708 সালে কোম্পানি সংযুক্ত রুপে আত্মপ্রকাশ করে -The United Company of Merchants of English Trading to the East Indies’ নামে যার অস্তিত্ব ছিল 1858 সাল অব্দি।
Modern age and arrival of foreigners
ডেন (Danish)
- ডেনদের ভারতে আগমন ঘটে 1616 সালে। 1620 সালে তারা ত্রাঙ্কুবার (তামিলনাড়ু)-র, 1676 সালে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে (প্রধান কার্যালয়) এবং 1756 সালে নিকোবার দ্বীপপুঞ্জে তাদের ঘাঁটি তৈরি করে।
- 1616 সালে ড্যানিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর স্থাপিত হয়েছিল।
- ড্যানিশরা 1620 সালে ত্রাঙ্কুবারে ফোর্ট ডানসবার্গ স্থাপন করে।
- কিন্তু ভারতে নিজেদের প্রতিপত্তি স্থাপনে ব্যর্থ হয় তারা।
- 1845 সালে তারা তাদের সমস্ত কিছু ব্রিটিশদের বিক্রয় করে দেয়।
Modern age and arrival of foreigners
ফরাসী (French)
- চতুর্দশ লুইয়ের শাসনকালে কোলবার্টের উদ্যোগে 1664 খ্রীষ্টাব্দে ফ্রেঞ্চ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্থাপিত হয়।
- 1668 সালে ফ্রাঙ্কোয়িস ক্যারোনের উদ্যোগে সুরাটে তাদের প্রথম কারখানা। দ্বিতীয় কারখানাটি 1669 সালে মসুলিপত্তনমে স্থাপিত হয়।
- ফ্রান্সিস মার্টিন 1673 সালে পন্ডিচেরী স্থাপন করে সেখানকার গভর্নর হন।
- অতঃপর, পন্ডিচেরী ফরাসীদের মূল ঘাঁটিতে পরিণত হয় এবং পরবর্তীকালে চন্দননগরে একটি ফ্যাক্টরি গড়ে ওঠে।
- ফরাসীরা 1739 সালে মাহে (মালাবার), ইয়ানাম (অন্ধ্রপ্রদেশ) ও করাইকাল (তামিলনাড়ু) অধিগ্রহণ করে।
- 1742 সালে ডুপ্লে পন্ডিচেরীর গভর্নর পদে আসীন হন। অতঃপর ফরাসীদের বাণিজ্য নীতি ধীরে ধীরে আগ্রাসী সাম্রজ্যবাদী নীতিতে রুপান্তরিত হয়। ফলস্বরুপ ইঙ্গ-ফরাসী দ্বন্দ্বের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।
Modern age and arrival of foreigners