Are Vitamins and Minerals Nutrients?

Are Vitamins and Minerals Nutrients?
Vitamins and Minerals স্বাস্থ্যরক্ষা ও রোগপ্রতিরোধে খাদ্য-পানীয়ের প্রভাব

মানবদেহে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ স্বাভাবিকভাবে ঘটার জন্য উপযুক্ত শক্তির প্রয়োজন হয় যার প্রধান উৎস হল খাদ্য-পানীয়। যে সকল সামগ্রী শরীরে গ্রহণ করলে মানুষের শরীরে বৃদ্ধি, পুষ্টি, ক্ষয়পূরণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে তাকেই খাদ্যবস্তু বলে ধরা হয়। প্রচুর পরিমাণ খাদ্য খেলেই যে এই সকল কার্যকলাপ বেশি পরিমাণে ঘটবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য নির্দিষ্ট সময়ে খেলে তবেই স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ সম্ভব। খাদ্য সম্বন্ধে পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। তার মধ্যে দেহ পরিপোষক খাদ্য অর্থাৎ শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট সম্বন্ধে বিশদভাবে বলা হয়েছে। এখানে দেহ সংরক্ষক খাদ্য, যেমন-ভিটামিন ও খনিজ লবণ সম্বন্ধে আলোচনা করা হচ্ছে। Vitamins and Minerals
ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ (Vitamin)
খাদ্যবস্তুতে এক প্রকারের শক্তিশালী সরল জৈব যৌগ থাকে যা পরিমাণে খুবই কম কিন্তু প্রাণীদেহের স্বাভাবিক ও সঠিক শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপের জন্য অপরিহার্য্য তাকে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ বলা হয়। এছাড়া এই ভিটামিনের অভাব ঘটলে মানুষের শরীরের অনেকরকম বিকৃতি দেখা যায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বিভিন্ন প্রকার রোগ অনায়াসে মানুষকে আক্রমণ করে। নিচে এদের সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে। ভিটামিন বিভিন্ন প্রকার। যেমন-ভিটামিন-‘এ’, ভিটামিন-‘বি- কমপ্লেক্স’, ভিটামিন-‘সি’, ভিটামিন-‘ডি’, ভিটামিন-‘ঈ’, ভিটামিন-‘কে’ এবং ভিটামিন ‘এইচ’। Vitamins and Minerals
Table of Contents
ভিটামিন-এ (Vitamin-A)
ভিটামিন-এ দুই প্রকারের যথা-ভিটামিন-এ, বা রেটিনল এবং ভিটামিন-এ, বা ডিহাইড্রোরেটিনল। এই ভিটামিন মানবশরীরে প্রত্যহ ১০০০-১২০০ মাইক্রোগ্রাম গ্রহণ করা আবশ্যক।
উৎস– ডিম, বিভিন্ন প্রকার মাছ, মাছের তেল, পাঁঠার মেটুলি, খাসি ও ভেড়ার মাংস ও চর্বি, দুধ, মাখন, গাজর, টম্যাটো, পালংশাক, পাকা হলুদ ফল, রাঙা আলু, নটেশাক, মটরশুঁটি, লাউ, পেঁপে, সিম, পাকা আম, সবুজ শাকসব্জী। এই ভিটামিন বেশি তাপে নষ্ট হয়ে যায়। তাই রান্নার সময়ে ঢাকা দেওয়া পাত্রে রেখে রান্না করতে হবে।
কাজ– মানবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করা; দৃষ্টিশক্তির বৃদ্ধি ঘটানো; স্নায়ুর কর্মক্ষমতা বজায় রাখা; চোখ, কান, শ্বাসযন্ত্র, মূত্রযন্ত্র প্রভৃতির রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করা; শরীরের সমস্ত অংশের মিউকাস মেমব্রেন অর্থাৎ শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর স্বাভাবিক সক্রিয়তা বজায় রাখা প্রভৃতি ভিটামিন ‘এ’-র কাজ।
অভাবজনিত লক্ষণ- রাতকানা, জেরথ্যালমিয়া, চক্ষুর ছানি, দেহত্বক শুষ্ক ও খসখসে হওয়া, বৃক্কীয় পাথুরী (Kidney Stone) সৃষ্টি হওয়া, স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া প্রভৃতি রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়।
এই ভিটামিন গ্রহণ বেশি হয়ে গেলে গা বমি ভাব, মাথার যন্ত্রণা, ঘুম ভাব, চুলওঠা, ত্বকের ক্ষয়, হঠাৎ ওজন হ্রাস পাওয়া, চোখের ক্ষত, অকারণে রক্তক্ষরণ প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। Vitamins and Minerals
What is Cell? Defination – structure – types – function /All in one in Bengali
ভিটামিন-বি-কমপ্লেক্স (Vitamin-B-Complex)
ভিটামিন-বি-কমপ্লেক্স হল কতকগুলি ভিটামিনের সমষ্টি। এই গ্রুপের অন্তর্গত প্রধান প্রধান ভিটামিন গুলি হল বি1, বি2, বি3, বি4, বি5, বি6, এবং বি1২
ভিটামিন-বি1 বা থায়ামিন (Thiamin)–
একজন বয়স্ক মানুষের প্রত্যেক দিনের খাদ্যে ১.৫ মিগ্রা ভিটামিন-বি1 থাকা প্রয়োজন। গর্ভবতী মহিলাদের প্রত্যহ ১.৮-২মিগ্রা থায়ামিন গ্রহণ প্রয়োজন।
উৎস- ঈষ্ট, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, ডাল, বাদাম, মটরশুঁটি, বরবটি, বিট, গাজর, শালগম, ফুলকপি, গম, যব, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
কাজ- শর্করা, ফ্যাট ও প্রোটিন সংশ্লেষে উৎসেচকদের কাজে সাহায্য করা এই ভিটামিনের প্রধান কাজ।
অভাবজনিত লক্ষণ- বেরিবেরি, স্নায়ুর দুর্বলতা, হার্টের দুর্বলতা, পলিনিউরাইটিস, শ্বাসযন্ত্রের পীড়া প্রভৃতি রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়। Vitamins and Minerals
ভিটামিন-বি2 বা রাইবোফ্ল্যাভিন (Riboflavin)-
পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রত্যেক দিনের খাদ্যে এই ভিটামিন ১.৬-২ মিগ্রা হওয়া দরকার।
উৎস- ঈষ্ট, সকল প্রকার শস্যদানা, সবুজ শাকসব্জী, দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, বিভিন্ন প্রকার ডাল ইত্যাদি।
কাজ- দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখা, হজম ও বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করা, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির সক্রিয়তা বজায় রাখা।
অভাবজনিত লক্ষণ- জিহ্বার প্রদাহ, ঠোঁট ফাটা, ঠোঁটের কোণে ঘা, চোখের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া, চুল উঠে যাওয়া, চামড়া শুকনো ও খসখসে হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। Vitamins and Minerals
ভিটামিন-বি3 বা নিয়াসিনামাইড বা নিকোটিনিক অ্যাসিড (Niacinamide or Nicotinic acid)-
একজন বয়স্ক মানুষের প্রত্যেক দিনের খাদ্যে কমপক্ষে ১৫-১৮ মিগ্রা এবং গর্ভবতী স্ত্রীলোকের খাদ্যে ২০-২২ মিগ্রা ভিটামিন-বি3 থাকা প্রয়োজন।
উৎস– ঈষ্ট, শস্যদানা, সকল প্রকার ডাল, সবুজ শাকসব্জী, মটরশুঁটি, বরবটি, টম্যাটো, দুধ, ডিমের কুসুম, মাছ, মাংস প্রভৃতি।
কাজ– দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখা, শর্করা ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করা, স্নায়ুতন্ত্রের সতেজতা বজায় রাখা, পেলেগ্রা নিবারণ প্রভৃতি।
অভাবজনিত লক্ষণ- চামড়া শুকনো ও খসখসে হয়ে যাওয়া, জিভ ফুলে ওঠা এবং তার রং কালো অথবা লাল হওয়া, পেটের বিভিন্ন গণ্ডগোল, মানসিক বিকলতা, ওজন হ্রাস পাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। Vitamins and Minerals

ভিটামিন-বি4 বা ফোলিক অ্যাসিড (Folic Acid)-
একজন প্রাপ্তবয়স্কের প্রতিদিনের খাদ্যে কমপক্ষে ১০০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি, থাকা প্রয়োজন।
উৎস- ঈষ্ট, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, গম, যব, ভুট্টা, সবুজ শাকসব্জী, টম্যাটো, গাজর, ডিমের কুসুম প্রভৃতি।
কাজ- দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখা, রক্তে R.B.C. ও হিমোগ্লোবিন-এর মাত্রা বজায় রাখা প্রভৃতি ভিটামিন বি4 এর কাজ।
অভাবজনিত লক্ষণ- রক্তাল্পতা বিশেষতঃ গর্ভাবস্থায়, দুর্বলতা, ওজন হ্রাস পাওয়া, প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। Vitamins and Minerals
ভিটামিন-বি5 বা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (Pantothenic Acid)-
একজনপূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রত্যেক দিনের খাদ্যে কমপক্ষে ১০ মিগ্রা ভিটামিন বি, থাকা প্রয়োজন।
উৎস– ঈষ্ট, সকল প্রকার শস্যদানা, বিভিন্ন প্রকার ডাল, আলু, রাঙা আলু, মটরশুঁটি, দুধ, ডিমের কুসুম, মাংস, আখের রস, গুড় প্রভৃতিতে ভিটামিন বি5 বর্তমান।
কাজ- শর্করা, চর্বি জাতীয় খাদ্যের বিপাকে সাহায্য করে।
অভাবজনিত লক্ষণ- স্পাইন্যাল কর্ডের ক্ষয়সাধন, থাইমাস ও অ্যাড্রোনাল গ্রন্থির কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, ত্বকের ক্ষয়, চুলের ফেটে যাওয়া বা অকাল পক্কতা, হজমের গোলমাল প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। Vitamins and Minerals
ভিটামিন-বি6 বা পাইরিডক্সিন (Pyridoxin)-
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রত্যেক দিনের খাদ্যে কমপক্ষে ২.১-২.২ মিগ্রা, একজন শিশুর প্রত্যেক দিনের খাদ্যে কমপক্ষে ০.৪-০.৫ মিগ্রা এবং গর্ভবতী মহিলার প্রত্যেক দিনের খাদ্যে কমপক্ষে ২.৫-২.৭ মিগ্রা ভিটামিন-বি, থাকা প্রয়োজন।
উৎস- বিভিন্ন প্রকার শস্যদানা যেমন, চাল, গম, যব, ভুট্টা, জোয়ার; সবুজ শাকসব্জী, ঈষ্ট, মাংস, ডিম, মাছ, ভাতের ফেন প্রভৃতিতে ভিটামিন বি6 থাকে।
কাজ-এই ভিটামিন শর্করা জাতীয় খাদ্য, আমিষ জাতীয় খাদ্য ও চর্বিজাতীয় খাদ্যের বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে।
অভাবজনিত লক্ষণ- স্নায়ুর দুর্বলতা, বৃদ্ধি ঠিকমত না হওয়া, ওজন হ্রাস পাওয়া, ক্রোধ বৃদ্ধি হওয়া, গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেওয়া, জনন ক্ষমতা কমে যাওয়া, হজমের গোলযোগ, চর্মরোগ দেখা দেওয়া প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। Vitamins and Minerals
ভিটামিন-বি1২ বা সায়ানোকোবালামিন (Cyanocobalamin)-
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের খাদ্যে কমপক্ষে ৩ মিগ্রা, একজন গর্ভবর্তী মহিলার প্রত্যেক দিনের খাদ্যে কমপক্ষে ১০-১২ মিগ্রা এই ভিটামিন থাকা প্রয়োজন।
উৎস– সবুজ শাকসব্জী, সব রকমের ফলমূল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ঘি, প্রভৃতিতে ভিটামিন বি,, যথেষ্ট পরিমাণে থাকে।
কাজ-রক্তে Glucose অর্থাৎ শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করা, রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করা প্রভৃতি ভিটামিন-বি1২-এর কাজ।
অভাবজনিত লক্ষণ- রক্তাল্পতা, স্নায়ুর দুর্বলতা, অপুষ্টির লক্ষণ, রক্তে শর্করা বৃদ্ধিপাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। Vitamins and Minerals
ভিটামিন-সি (Vitamin-C)
ভিটামিন-সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Ascorbic Acid)- একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রত্যেক দিন কমপক্ষে ১০০ মিগ্রা ভিটামিন-সি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
উৎস– মাছ, মাংস, দুধ প্রভৃতিতে সামান্য পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে। তবে স্তনদুগ্ধে যথেষ্ট পরিমাণে এই ভিটামিন থাকে। এই ভিটামিনের প্রধান উৎসগুলি হল-বিভিন্ন প্রকার সব্জী যেমন, বাঁধাকপি, পালং শাক, ফুলকপি, লেটুস, বীন, বরবটি, কাঁচালঙ্কা, বিভিন্ন ফলমূল যেমন, কমলালেবু, মুসুম্বী লেবু, আনারস, আপেল, আম, পেয়ারা, কলা, আমলকী, আখ, তরমুজ, টম্যাটো, আঙুর, পেঁপে, শশা, পিঁয়াজ, ভিজে ছোলা প্রভৃতি। ভিটামিন-সি অধিক তাপে নষ্ট হয়ে যায়। তাই রান্নার সময় ঢাকনা দেওয়াই পাত্রে স্বল্প তাপে এই সকল খাদ্যবস্তু রান্না করতে হবে।
কাজ- শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করা, রক্তের লোহিতকণিকার নক্রিয়া সংখ্যা বৃদ্ধি করা, অগ্ন্যাশয়ে ইনস্যুলিন উৎপাদনে সাহায্য করা, হাড়, তরুণাস্থি, দাঁত, মাড়ি আর প্রভৃতির স্বাভাবিক গঠন ও কার্যকারিতা বজায় রাখা প্রভৃতি ভিটামিন-সি এর কাজ।
অভাবজনিত লক্ষণ- স্কার্ভিরোগ ভিটামিন সি-এর অভাবে হয়। শিশুদের দাঁত ও হাড়ের গঠন বিকৃত হয়। মাড়ি স্পঞ্জের মত হয়। মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হয়। ওজন হ্রাস পাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, রক্তাল্পতা দেখা দেওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। Vitamins and Minerals
ভিটামিন-ডি (Vitamin-D)
ভিটামিন-ডি দুই প্রকৃতির হয়। একটিকে D₂ বা Ergocalciferol (এরগো- ক্যালসিফেরল) এবং অপরটিকে D₃ বা Cholecalciferol (কোলোক্যালসিফেরল) বলা হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৮-১০ µm এবং শিশু ও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের দৈনিক ১৪-১৫ µm ভিটামিন-ডি গ্রহণ আবশ্যক।
উৎস- সামুদ্রিক মাছ যথা, কড় ও হ্যালিবাট-এর যকৃত নিঃসৃত তেল এই ভিটামিনের প্রধান উৎস। সূর্যালোকের অতিবেগুনী রশ্মি হতেও মানবদেহে এই ভিটামিন সংশ্লেষিত হয়। এছাড়া মাছের ডিম, ডিমের কুসুম, ঘি, জলসহ ছানা, দুধ, মাখন প্রভৃতিতেও এই ভিটামিন অল্প পরিমাণে থাকে। ভিটামিন ডি রান্নার ফলে নষ্ট হয় না।
কাজ- ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণ, অস্থি অর্থাৎ হাড়ের গঠন এবং দাঁতের গঠন, রক্তে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা প্রভৃতি ভিটামিন ডি এর কাজ।
অভাবজনিত লক্ষণ- শিশুদের রিকেট রোগ এবং বয়স্কদের বিশেষতঃ গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের অস্টিওম্যালেসিয়া (Oesteomalacia) রোগ হয়। এছাড়া ভিটামিন-ডি-র অভাবে দাঁত ও মাড়ির রোগও হতে দেখা যায়। Vitamins and Minerals
ভিটামিন-ঈ (Vitamin E)
ভিটামিন-ঈ বা টোকোফেরল তিনপ্রকার যথা-আলফা টোকোফেরল , বিটা টোকোফেরল এবং গামা টোকোফেরল । একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের খাদ্যে কমপক্ষে ১২-১৬ মিগ্রা ভিটামিন-ঈ থাকা প্রয়োজন।
উৎস– শস্যদানা থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন প্রকার তেল, সয়াবিন তেল, মাংস, ডিম, দুধ, সকল প্রকার সবুজ শাকসব্জী, নারকেল, কলা, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, গম প্রভৃতিতে ভিটামিন- ঈ প্রচুর পরিমাণে থাকে।
কাজ– স্বাভাবিক প্রজনন ক্রিয়ায় সহয়তা করা, মাংসপেশীর গঠনে এবং স্বাভাবিক সক্রিয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করা, গর্ভাবস্থায় ভূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করা, বন্ধ্যাত্ব মোচন করা প্রভৃতি এই ভিটামিনের কাজ।
অভাবজনিত লক্ষণ- গর্ভধারণ না করা, বারংবার গর্ভপাত হওয়া, পেশী দুর্বল হওয়া এবং তা থেকে হাত ও পায়ে খিল ধরা, স্তনে অর্বুদ হওয়া, হৃৎপিণ্ড ধমনীর কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। Vitamins and Minerals
ভিটামিন-কে (Vitamin-K)
ভিটামিন-কে তিন প্রকারের হয়, যথা-ভিটামিন-কে,, বা ফাইটোমেনা’ উওন (Phytonenadion), ভিটামিন-কে, বা মেনাকুইনোন (Menaquinone) এবং ভিটামিন-কে, বা মেনাডিওন (Menadione)। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের খাদ্যে কমপক্ষে ৫ মিগ্রা ভিটামিন-কে থাকা প্রয়োজন।
উৎস- পালংশাক, লেটুস, বাঁধাকপি, টম্যাটো, সয়াবিন, ডিমের কুসুম প্রভৃতিতে ভিটামিন-কে থাকে। এছাড়া অন্যান্য সবুজ শাকসব্জীতেও ভিটামিন-কে থাকে।
কাজ- রক্তের প্রোপ্রম্বিন ও ফ্যাক্টর VII এর স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখে যা স্বাভাবিক রক্ততঞ্চনে সাহায্য করে।
অভাবজনিত লক্ষণ- ক্ষতস্থান বা কাটা অঙ্গ থেকে রক্তপাত শুরু হলে তা সহজে বন্ধ হতে চায় না। যকৃতে রোগ থাকলে রক্তক্ষরণ হয় যা সহজে কমতে চায় না। রক্ত চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটে থাকে। স্ত্রীলোকেদের অতিরজঃ হয়ে থাকে। Vitamins and Minerals
খনিজলবণ (Minerals)
দেহে শক্তি সরবরাহ করে না কিন্তু মানবশরীরের অপরিহার্য উপাদানই হল খনিজ লবণ। এদের অভাব ঘটলেও মানুষের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ স্বাভাবিকভাবে ঘটে না। নিচে কতকগুলি খনিজপদার্থের বিবরণ দেওয়া হচ্ছে।
লৌহ বা আয়রণ (Iron)-একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ২০-২৫ মিগ্রা এবং গর্ভবতী মহিলার এর পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়া দরকার।
উৎস-ডিম, মাংস, মাছ, ছোলা, মটর, মুসুর ডাল, সবুজ শাকসব্জী, সকল প্রকার ফলমূল প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ থাকে।
কাজ-রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে অক্সিজেন পরিবহণে সাহায্য করা, হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণ, লোহিত কণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করা, খাদ্যবস্তুর বিপাকে সাহায্য করা, পেশীতে অক্সিজেন সরবরাহ করা প্রভৃতি আয়রণের কাজ।
অভাবজনিত লক্ষণ-রক্তাল্পতা রোগাক্রমণ, গর্ভাবস্থায় অ্যানিমিয়া, গর্ভস্থ ভ্রুণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, ওজন হ্রাস পাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। Vitamins and Minerals
ক্যালসিয়াম (Calcium)-একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের খাদ্যে ১-১.৫ মিগ্রা ক্যালসিয়াম থাকা আবশ্যক। গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ৩ মিগ্রা এর কাছাকাছি ক্যালসিয়াম গ্রহণ আবশ্যক।
উৎস-দুধ, পনির, ডিম, সবুজ শাকসব্জী, কূপের জল প্রভৃতিতে ক্যালসিয়াম থাকে। কাজ-হাড় ও দাঁতের প্রধান উপাদান এই ক্যালসিয়াম অর্থাৎ এদের গঠনে সাহায্য করা, রক্ততঞ্চনে সাহায্য করা, পেশীর নড়াচড়ায় সাহায্য করা, স্নায়ুকে সবল রাখতে সাহায্য করা, রক্তজালকের আন্তঃআবরণী কলার ভেদ্যতা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করা প্রভৃতি ক্যালসিয়ামের কাজ। অভাবজনিত লক্ষণ-শিশুদের রিকেট, বয়স্কদের হাড়ের কোমলতা প্রাপ্তি, ধনুষ্টঙ্কার প্রভৃতি রোগ হয়। এছাড়া স্তনদুগ্ধের হ্রাসপ্রাপ্তি, গর্ভস্থ শিশুর গঠন বিকৃত হওয়া প্রভৃতি লক্ষণও প্রকাশ পায়। ছোট শিশুদের দাঁত সময়ে না ওঠা, ঠিকভাবে চলাফেরা করতে না পারা প্রভৃতি এই খনিজ পদার্থের অভাবেই ঘটে। Vitamins and Minerals
তামা বা কপার (Copper)– উৎস-দুধ, সামুদ্রিক জল, সকল প্রকার সবুজ শাকসব্জী। কাজ-হাড়ের গঠন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
সোডিয়াম (Sodium)- উৎস-খাবার লবণ, জল, দুধ প্রভৃতিতে সোডিয়াম থাকে। সবুজ শাকসব্জীতেও অল্প পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। কাজ-রক্ত ও মূত্রের বিক্রিয়া (PH) স্বাভাবিক রাখা, হৃৎপিণ্ডের সংকোচন এবং প্রসারণ স্বাভাবিক রাখা, স্নায়ুতন্ত্রকে সতেজ রাখা প্রভৃতি সোডিয়ামের কাজ।
পটাসিয়াম (Potassium)-উৎস-ডিম, মাছ, মাংস, সবুজ শাকসব্জী। কাজ-স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ স্বাভাবিক রাখা, রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহণে সাহায্য করা, পেশীর সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখা প্রভৃতি। Vitamins and Minerals
ম্যাঙ্গানিজ (Manganese)- উৎস-ডিমের কুসুম, বাদাম, বাঁধাকপি, লেটুস, কমলালেবু প্রভৃতিতে ম্যাঙ্গানিজ থাকে। কাজ-স্নায়ুকে সবল ও সতেজ রাখা, উৎসেচকের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা, রক্তকে পরিস্তুত করা, দেহে প্রবিষ্ট বিষাক্ত পদার্থকে নষ্ট করা, গর্ভস্থ ভ্রুণের পূর্ণাঙ্গ প্রাপ্তিতে সাহায্য করা প্রভৃতি ম্যাঙ্গানিজের কাজ।
আয়োডিন (Iodine)-একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ১৫০৪ ৪ আয়োডিন গ্রহণ আবশ্যক। উৎস-খাবার লবণ, পানীয় জল, ডিম, দুধ, মাছ, সবুজ শাকপাতা, বীট, গাজর, মটরশুঁটি, কমলালেবু, আপেল প্রভৃতি। কাজ-থাইরয়েড গ্রন্থির ক্রিয়াকলাপ স্বাভাবিক রাখা, ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করা প্রভৃতি। অভাবজনিত লক্ষণ-গলগণ্ড, মিক্সিডিমা ও ক্রিটিনিজম প্রভৃতি রোগ হয়।
ফুওরিন (Fluorine)-একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রত্যহ ১-৩ মিগ্রা ফ্লুওরিনের আবশ্যক। উৎস-খাবার জল, সামুদ্রিক মাছ, চা প্রভৃতি। কাজ-দাঁতের স্বাভাবিক গঠনে সাহায্য করা এবং ক্ষয় রোধ করা। অভাবজনিত লক্ষণ-দাঁতে বাদামী বা হলুদ ছোপ পড়া, দাঁতে গর্ত হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়। Vitamins and Minerals
ফসফরাস (Phosphorus)- একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ১ গ্রাম ফসফরাস গ্রহণ করা আবশ্যক। উৎস-দুধ, সবুজ শাকপাতা, ডিম, রুই মাছ, ভেটকি মাছ, ইলিশ মাছ, সকল প্রকার সামুদ্রিক মাছ প্রভৃতি। কাজ-হাড় ও দাঁতের উপাদান হিসেবে অবশ্য দরকারী, পেশীর সংকোচনে সাহায্য করা, ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করা প্রভৃতি ফসফরাসের কাজ। অভাবজনিত লক্ষণ-রিকেট, গর্ভস্থ শিশুর বিকৃত গঠন, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া, শরীরের বল কমে যাওয়া, দাঁতের রোগে ভোগা প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়।
সালফার (Sulpher)–উৎস-ডিম, মাছ, মাংস, বাঁধাকপি, শাকপাতা, বাদাম, পেঁয়াজ, ডুমুর, খেজুর, দুধ, ঘোল প্রভৃতি। কাজ-নখ, চুল ও তরুণাস্থির গঠনে সাহায্য করা এবং তাদের কাঠিন্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করা, দেহের সকলপ্রকার বিষক্রিয়াকে নষ্ট করা, দুগ্ধের তঞ্চনে সাহায্য করা, ইনস্যুলিনের জৈব জারণে সাহায্য করা প্রভৃতি সালফারের কাজ। নিচে কতকগুলি সহজলভ্য খাদ্যের মধ্যে কোন জাতীয় উপাদান কি পরিমাণে থাকে তা দেওয়া হচ্ছে। এই তালিকা দেখে খাবার গ্রহণ করলে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব। Vitamins and Minerals