Easy Definition of Indian Politics

definition of indian politics
Easy Definition of Indian Politics Article in Bengali

Table of Contents
‘রাজনীতি’ শব্দটির উৎপত্তি:
গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের কালজয়ী গ্রন্থটির নাম পলিটিক্স (Politics)। গ্রিক শব্দ ‘পোলিস্’ (‘polis’) থেকে ইংরেজি ‘পলিটিক্স’ শব্দটি এসেছে। ‘পোলিস্’ শব্দের অর্থ ‘নগর’ (‘city’)। সমকালীন গ্রিক নগররাষ্ট্রসমূহ (city states) এবং তাদের অনুসৃত নীতি ও সমস্যাদি-সংক্রান্ত আলোচনাকে অ্যারিস্টট্ল ‘রাজনীতি’র বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু আকৃতি, প্রকৃতি, কার্যাবলি প্রভৃতি সর্বক্ষেত্রেই আধুনিক রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রের মৌলিক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। তা ছাড়া, বর্তমানে মানুষের রাজনৈতিক জীবন অত্যন্ত জটিল ও সমস্যাসংকুল। প্রাচীন গ্রিক পদ্ধতিতে এইসব সমস্যার সমাধান করা আদৌ সম্ভব নয়। তাই ‘রাজনীতি’ বলতে অ্যারিস্টট্ল যা বোঝাতে চেয়েছিলেন, বর্তমানে সেই অর্থে ‘রাজনীতি’ শব্দটির প্রয়োগ দেখা যায় না।
Definition of Indian Politics

রাজনীতির সংজ্ঞা:
মানুষের জীবন এবং মনুষ্য সমাজের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাজনীতি। এই রাজনীতিকে কেন্দ্র ক’রেই মানুষের সামগ্রিক জীবনের রথচক্র আবর্তিত হয়। কিন্তু ‘রাজনীতি’ বলতে কী বোঝায়, তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ববিদদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। সাধারণভাবে রাজনীতি বলতে দলীয় রাজনীতি (party politics) অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মতাদর্শগত ও ক্ষমতা দখলের লড়াই, নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক অনুসৃত কৌশল প্রভৃতিকে বোঝায়। কিন্তু রাজনীতি সম্পর্কে এরূপ ধারণা কেবল বিভ্রান্তিকরই নয়, সংকীর্ণতাদোষে দুষ্টও বটে। আবার, কেউ কেউ ‘ন্যায়নীতিবর্জিত উপায়ে ব্যক্তিগত সুযোগসুবিধা লাভ’ (‘the unscrupulous pursuit of private advantage’)-কে ‘রাজনীতি’ বলে চিহ্নিত করেন।
কারও কারও মতে, রাজনীতি হল ‘অধিকতর সভ্য উপায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ’ (‘the more civilised modes of decision- making’)। কিন্তু হেগ, হ্যারপ ও ব্রেসলিন (Hague, Harrop and Breslin) তাঁদের রচিত কম্পারেটিভ গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পলিটিক্স: অ্যান্ ইন্ট্রোডাকশন (Comparative Government and Politics: An Introduction) নামক পুস্তকে ‘রাজনীতি’কে এমন একটি ‘প্রক্রিয়া’ (‘process’) হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যার সাহায্যে গোষ্ঠীসমূহ যৌথ- ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। গোষ্ঠীগুলির আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এদের মধ্যে এক প্রান্তে যেমন একটি একক পরিবার রয়েছে, অন্য প্রান্তে তেমনি রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় (international community) |
open a training center with CBMCE

রাজনীতির প্রকৃতি:

হেগ, হ্যারপ ও ব্রেসলিন মনে করেন যে, রাজনীতি বিশ্লেষণের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল সেইসব অবস্থাকে খুঁজে বের করা, যেখানে গোষ্ঠীসমূহ শান্তিপূর্ণ ও কার্যকরভাবে তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারে। এই অর্থে রাজনীতি হল ‘একটি গঠনমূলক ও বাস্তব বিষয়’ (‘a constructive and a practical subject’)। তবে তাঁরা একথাও স্বীকার করেছেন যে, ওইসব গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণের উপায় সম্পর্কে যথেষ্ট মতবিরোধ থাকে। অনেক সময় তাদের মধ্যে লক্ষ্য সম্পর্কে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হলেও লক্ষ্য পূরণের উপায় সম্পর্কে অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে মতবিরোধ বিশেষভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। এই মতবিরোধ দূর করার প্রয়োজনীয়তা থেকেই রাজনীতির উৎপত্তি ঘটে।
কোনোকিছুর অপ্রতুলতা (scarcity) থেকেই বিরোধের সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া, দুষ্প্রাপ্য জিনিস পাওয়া গেলেও তার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ দেখা দিতে পারে। আবার, স্বাভাবিক মতপার্থক্যজনিত কারণেও বিরোধ দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। এরূপ বিরোধের নিষ্পত্তির জন্য যৌথভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কখন তারা একটি স্থান ত্যাগ ক’রে অন্য একটি স্থানের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে, সে বিষয়ে একটি যাযাবর উপজাতি যৌথভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। definition of indian politics

অনুরূপভাবে, কোনো একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কখন যুদ্ধ শুরু করা উচিত, সে বিষয়ে একটি আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রকে অবশ্যই যৌথভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। এইভাবে একটি গোষ্ঠী সামগ্রিকভাবে যে-সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাকে অখন্ড সিদ্ধান্ত বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এইসব দিক থেকে বিচার ক’রে হেগ, হ্যারপ ও ব্রেসলিন মন্তব্য করেছেন যে, রাজনীতির বিষয়বস্তু হল একটি গোষ্ঠীর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সম্পদের বণ্টন। তবে একথাও সত্য যে, কেবল একটি যৌথ সমস্যার অবস্থিতি সব সময় একটি যৌথ সমাধানের পথ খুঁজে বের করার জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছা (political will)-র জন্ম দেয় না। তা ছাড়া, গোষ্ঠীর আকার যত বৃহৎ হবে, তার সমস্যাগুলির সমাধান করা ততই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
উদাহরণ হিসেবে পরিবেশরক্ষার কথা বলা যেতে পারে। পরিবেশরক্ষার সমস্যা হল একটি মৌলিক সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানের জন্য যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরিবেশরক্ষার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করলেও অনেক সময় সেই আগ্রহ বাস্তবে রূপায়িত হতে পারে না। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অতি উন্নত রাষ্ট্রগুলি মুখে পরিবেশরক্ষার কথা বললেও বাস্তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিবেশরক্ষার যে-কোনো যৌথ প্রয়াসের শরিক হতে রাজি নয়। ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশরক্ষার প্রয়াস অদ্যাবধি সাফল্য লাভ করতে পারেনি। এই ধরনের যৌথ সমস্যা এবং সেইসব সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে ঐকমত্যের মধ্যে যে-বিরাট ফাঁক রয়েছে, তার কারণ ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করাই হল রাজনীতির কাজ।
অ্যালান বল, ইস্টন প্রমুখের রাজনীতি সংক্রান্ত অভিমত:

অ্যালান বল তাঁর মডার্ন পলিটিক্স অ্যান্ড গভর্নমেন্ট (Modern Politics and Government) নামক পুস্তকে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, ‘রাজনীতি’ হল ‘একটি কার্যকলাপ’ (‘an activity’), ‘কোনো নৈতিক নির্দেশ নয়’ (‘not a moral prescription’)। তাঁর মতে, রাজনৈতিক কার্যকলাপ সমাজের সর্বস্তরে বিরোধ ও বিরোধ নিষ্পত্তি (conflict and conflict resolution)-র সঙ্গে যুক্ত থাকে। সমাজের সর্বস্তরেই রাজনীতির অবস্থিতি লক্ষ করা যায় বলে তিনি এটিকে ‘একটি সর্বজনীন কার্যকলাপ’ (‘a universal activity’) বলে চিহ্নিত করেছেন।
উদাহরণ হিসেবে তিনি একটি পুতুল নিয়ে দুটি শিশুর মধ্যে বিরোধের কথা বলেছেন। দুটি শিশু একই সময়ে পুতুলটি পেতে আগ্রহী হলে কে পুতুলটি পাবে, তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বাধতে পারে। এমতাবস্থায় তুলনামূলকভাবে বলবান শিশুটি বলপ্রয়োগের মাধ্যমে অপর শিশুটির কাছ থেকে পুতুলটি কেড়ে নিতে পারে কিংবা মা এসে তাঁর অধিকতর শক্তিশালী পদমর্যাদা প্রয়োগ ক’রে তাদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে পারেন। এইভাবে সমাজের সর্বস্তরে পরস্পর-বিরোধী লক্ষ্য ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকেই বিরোধের উৎপত্তি ঘটে এবং হিংসা বা বলপ্রয়োগ, আলাপ-আলোচনা, দরকষাকষি, ভোটাভুটি প্রভৃতির মতো বিভিন্ন উপায় অনুসরণের মাধ্যমে সেইসব বিরোধের নিষ্পত্তি করা হয়।
ডেভিড ইস্টন (David Easton) রাজনীতি বলতে ‘মূল্যের কর্তৃত্বমূলক বণ্টন’ (‘authoritative allocation of values’)-কে বোঝাতে চেয়েছেন। তাঁর মতে, ‘মূল্য’ হল মানুষের অভীষ্ট সেইসব মূল্যবান জিনিস, যেগুলির প্রাপ্তি রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। আবার, ‘কর্তৃত্বমূলক বণ্টন’ বলতে ইস্টন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সেইসব ব্যক্তির সিদ্ধান্তকে বোঝাতে চেয়েছেন, যাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম। অনুরূপভাবে, আর্ল লাথাম (Earl Latham) তাঁর দ্য গ্রুপ বেসিস অব পলিটিক্স (The Group Basis of Politics) নামক গ্রন্থে রাজনীতিকে ব্যাপক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচারবিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতে, রাজনীতি হল সমাজের এমন একটি ‘প্রক্রিয়া’ (‘process’), যা ক্ষমতার কাঠামোর মাধ্যমে ‘মূল্যের বণ্টন’ (‘allocation of values’) করতে সমর্থ।definition of indian politics

মার্কসবাদীদের দৃষ্টিতে রাজনীতি:
সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করার প্রাথমিক নীতিগুলিকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মধ্যে বিশেষভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। তবে বুর্জোয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ববিদ কিংবা রাষ্ট্রদার্শনিকরা যে-দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনীতিকে বিচারবিশ্লেষণ করেন, মার্কসবাদীরা সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তার পর্যালোচনা করেছেন। মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনীতি হল এমন একটি শ্রেণিগত ধারণা, যা ক্ষমতাকে কার্যকর করার কার্যকলাপের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকে।
রাজনীতি গঠনের পেছনে অর্থনৈতিক উপাদানের চরম প্রভাব থাকায় লেনিন (Lenin) রাজনীতিকে ‘অর্থনীতির ঘনীভূত প্রকাশ’ (‘concentrated expression of economics’) বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, ‘রাজনীতি অর্থনীতির ঘনীভূত প্রকাশ’ হওয়ায় প্রচলিত সমাজব্যবস্থাকে সমর্থন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে রাজনীতি অর্থনীতির সেবা করে। এখানেই রাজনীতি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিগত ক্ষেত্রে বুর্জোয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রমুখের সঙ্গে মার্কসবাদীদের পার্থক্য। মার্কসবাদীদের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে বুর্জোয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ববিদেরা রাজনীতিকে অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনের একটি অংশ হিসেবে কিংবা অর্থনীতির দ্বারা প্রভাবিত নয় বলে মনে করেন।definition of Indian politics